থ‍্যালাসেমিয়া রোগ কেন হয়, এই রোগের লক্ষণ গুলো কী কী...?

থ‍্যালাসেমিয়া(Thalassemia) রোগ কেন হয়, এই রোগের লক্ষণ গুলো কী:-

মানব পপুলেশনে দেখা যায় এমন একটি জিনঘটিত রোগ, যার নাম হল-থ‍্যালাসেমিয়া। আমেরিকান চিকিৎসক থমাস বেনটন (Thomas Benton Cooley) সর্বপ্রথম 1925 খ্রিষ্টাব্দে শিশুদেহে b থ‍্যালাসেমিয়া মেজর রোগটিকে বর্ননা করেন 'এরিথ্রোব্লাস্টিক অ‍্যানিমিয়া' রোগরূপে। কিন্তু তাঁর নামানুসারে b থ‍্যালাসেমিয়া মেজর নামক রোগটি কুলির অ‍্যানিমিয়া (Cooley's anaemia) নামে বতর্মানে পরিচিত 

থ‍্যলাসেমিয়া (Thalassemia):-থ‍্যালাসেমিয়া মানুষের একটি বংশগত রোগ যাতে রক্তের অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে এুটি অথবা ঘাটতি দেখা যায়। এর ফলে রোগীর দেহে রক্তাল্পতা বা অ‍্যানিমিয়া দেখা দেয় ও অক্সিজেন পরিবহণে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

থ‍্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকার হয়। যেমন-- আলফা থ‍্যালাসেমিয়া (a-thalassemia): মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ‍্যপ্রাচ‍্য, চিন ও আফ্রিকা অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বিটা থ‍্যালাসেমিয়া (b-thalassemia): ভূমধ‍্যসাগরীয় অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

রোগের তীব্রতা অনুযায়ী থ‍্যালাসেমিয়া আবার দুইভাগে বিভক্ত। a এবং b থ‍্যালাসেমিয়া উভয়ক্ষেএেই এই দুই প্রকার থ‍্যালাসেমিয়া দেখা যায়। এরা হল-- থ‍্যালাসেমিয়া মেজর: এই রোগটি তীব্র প্রকৃতির। এই রোগের লক্ষণ ছমাস থেকে দুবছরের মধ‍্যে প্রকাশ পায়। এবং থ‍্যালাসেমিয়া মাইনর: এক্ষেএে রোগলক্ষণ তুলনামূলক কম তীব্র।

(A) এই রোগের লক্ষণ গুলি হল:-             1) অ‍্যানিমিয়া সৃষ্টি: হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব‍্যাহত হওয়ায় তীব্র অ‍্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়।
2) লৌহ সঞ্চয়: রোগীর দেহে বারবার রক্ত সঞ্চারণের ফলে লৌহ সঞ্চিত হয়, যা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। 
3) হাড়ের গঠন বিকৃত: অস্থিমজ্জা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় বলে হাড়ের গঠন-বিকৃতি ঘটে এবং রোগীর মুখ ও মাথার খুলির হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হয়।
4) প্লিহার বৃদ্ধি: প্লিহার অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা স্পিনোমেগালি ঘটে।
5) অন‍্যান‍্য লক্ষণ: এ ছাড়া বৃদ্ধি ব‍্যাহত হওয়া, জনডিস, ক্লান্তি প্রভেতি লক্ষণ দেখা যায়। থ‍্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদ অনুযায়ী মানুষের দেহে রোগের তীব্রতা ও লক্ষণগুলি পৃথক হয়।

(B) এই রোগের কারণ:-  থ‍্যালাসেমিয়া অটোজোমাল জনঘটিত প্রচ্ছন্ন একটি রোগ। এই রোগে হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিউলার বা গ্লোবিন প্রোটিন উৎপাদন ব‍্যাহত হয়। মানুষের 16 নং ক্সোমোজোমে (অটোজোমে) অবস্থিত দুটি পৃথক জিন (4টি অ‍্যালিল)---HBAI এবং HBA2-এর মিউটেশনের ফলে হিমোগ্লোবিনের a গ্লোবিন পলিপেপটাইড শৃঙ্খল তৈরি ব‍্যাহত হয়। চারটির মধ‍্যে দুটি অ‍্যালিলে মিউটেশন ঘটলে a থ‍্যালাসেমিয়া মাইনর (মৃদু মাএার) এ‍্যবং চারটি অ‍্যালিলেই মিউটেশন ঘটলে a থ‍্যালাসেমিয়া মেজর (তীব্র মাএার) দেখা দেয়।
অপরদিকে মানুষের 11 নং ক্সোমোজোম তথা অটোজোমে অবস্থিত একটি জিন (2টি অ‍্যালিল) HBB-এর মিউটেশনের ফলে হিমোগ্লোবিনের b গ্লোবিন পলিপেপটাইড শৃঙ্খল সংশ্লেষ ব‍্যাহত হয়। দুটি অ‍্যালিলের মধ্যে একটিতে মিউটেশন ঘটলে b থ‍্যালাসেমিয়া মাইনর (মৃদু মাএার) এবং দুটিতেই মিউটেশন ঘটলে b থ‍্যালাসেমিয়া মেজর (তীব্র মাএার) দেখা দেয়।

www.healthtips166.blogspot.com
 ---------------------------------------------------

Comments

Popular posts from this blog

থ‍্যালাসেমিয়া রোগের জেনেটিক কাউন্সেলিং (Autosomal disease thalassemia and genetic counselling)

জীববৈচিত্র্যের হটস্পট(Biodiversity hotspot) কাকে বলে, ভারতের(India) হটস্পট অঞ্চল কত গুলো.

মানব বিকাশের বিভিন্ন দশা, 1) সদ‍্যজাত(Newborn), 2) শৈশব(Childhood), 3) বয়ঃসন্ধি (Adolescence), 4) পরিণত দশা (Mature), 5) বার্ধক‍্য বা অন্তিম পরিণতি দশ (Old age or late mature phase), Phases of human development.