ইমিউনিউটি বাড়ান আসন-প্রাণায়ামে।
ইমিউনিউটি বাড়ান আসন-প্রাণায়ামে।
করোনা আতঙ্কে ভুগছে গোটা দুনিয়া। মাস্ক পরা ও ঘড়ি ধরে হাত ধোওয়ার হিড়িক চলছে। আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। ঋতু বদলের সময় চলছে। সর্দি, জ্বর, ঠান্ডা লেগে হাঁচি, কাশি- প্রতিবারের মতো শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের শরীরে একটা না একটা অসুবিধা হয়েই থাকে। এটা কিন্তু নির্দিষ্ট বয়সের সমস্যা নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ, কাবু হচ্ছে সকলেই। বিশেষ করে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। করোনার ক্ষেএেও একথা প্রমাণিত। যাঁদের ইমিউনিটি বেশি, তাঁদের এই রোগ সেভাবে কাবু রতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই সবাই চাইছেন নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে। বদল এসেছে খাদ্যতালিকায়। ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক সব্জি, ফল, জল তো রয়েছেই। কিন্তু আরও কিছু করা জরুরি।
দু'নাক ভরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস:- ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কী, সেটা বোঝা দরকার। আমাদের শরীরে বাইরে থেকে ঢুকে পড়া ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে থাবা বসাতে দেয় না শ্বেত রক্তকণিকা। এটিই আসলে দেহের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা। বিষয়টি রক্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সোজা কথায়, প্রত্যেকটি মানুষ যদি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু'নাক ভরে শ্বাস নেয় এবং ছাড়ে, তাইলেই ইমিউনিটি বাড়বে। ফুসফুসে অক্সিজেন সঠিক মাএায় প্রবেশ করবে। বুকের ভিতর ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা যথাযথভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এই প্রক্রিয়া খুবই সরল। অথর্ব, অসুস্থ, ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেএেও। চেয়ারে বসে, দাঁড়িয়ে, এমনকী বিছানায় শুয়েও করা যেতে পারে। শুধু মাথায় রাখতে হবে, মেরুদণ্ড যেন সোজা থাকে।
সহজ প্রাণায়াম:- যোগব্যায়ামে সহজ সরল কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যাকে বলে সহজ প্রাণায়াম। হাঁটতে হাঁটতেই করা যায়। আটটি পদক্ষেপে বুকভরে শ্বাস নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীর ১৬টি ধাপে তা ছাড়বেন। শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থরা এটি যথাক্রমে চার এবং আটটি পদক্ষেপে করতে পারে। ফলে প্রচুর অক্সিজেন বুকের ভিতর ঢুকে শ্বাসযন্ত্রকে সবল করে তুলবে। ডায়াফ্রাম আরও শক্তিশালী হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
সহজ প্রাণায়ামের ক্ষেএে মাথায় রাখতে হবে প্রথম ধাপগুলি যেন বড় হয়। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে হাঁটতে হবে। ছাড়ার সময় ঠিক উল্টোটা। ছোট ছোট পদক্ষেপে, দ্ধিগুণ হাঁটতে হবে। খেয়াল রাখবেন, কোনও দূষিত জায়গায় এই প্রাণায়াম করবেন না। যেখানে হাঁটবেন, সেখানে যেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে।
কপালভাতি:- কপালভাতি প্রায়াণামে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে। ফলে সমস্ত প্রত্যঙ্গ রক্তকে উপরের দিকে ধাক্কা দেয়। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ডায়াফ্রাম সক্রিয় হয়ে ওঠে। শ্বাসযন্ত্র সবল ও সুস্থ হয়। ইমিউনিটি বাড়াতে এর থেকে ভালো কিছু হয় না। কপালভাতি করার সময় যেদিকে নজর রাখবেন, তা হল- চোখ-মুখ যেন বন্ধ থাকে। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করতে হবে। পেট-নাভি দোলাবেন না। আরেকটি দিক জেনে রাখা উচিত, মনের সংযম দরকার। মন যেন অন্যদিকে না যায়। যোগ একটি আধ্যাত্মিক বিঞ্জান। অন্য কছু ভাবলে যোগব্যায়ামে কাজ হয় না। অনেকেই বলেন, অনেকদিন ধরে নিয়মিত কপালভাতি করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তাঁদের বলব, মনঃসংযোগ করুন। কপালভাতিই হোক বাষসহজ প্রাণায়াম- দুই মিনিটের কম করলে অভীষ্ট ফল পাওয়া যায় না। পরে ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট করতে পারলে, আমরা অভিঞ্জতা বলছে ইমিউনিটি বাড়বে। তবে, হূদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে কপালভাতি করা উচিত নয়। সেক্ষেএে প্রাণায়াম করার আগে চিকিৎসক বা যোগগুরুর সঙ্গে কথা বলা জরুরি।
আসন:- সমগ্রকভাবে সুস্থ এবং সুশূঙ্খল থাকার চেষ্টা করতে হবে। তাই দুই প্রণায়ামের পাশাপাশি আমরা কিছু আসন করতে পারি। উষ্ট্রাসন, সেতুবদ্ধাসন, মৎস্যাসন ইত্যাদি সহজ কিছু যোগাসন ইমিউনিটি বাড়াতে বিশেষ উপকারী। অনেকেরই পিঠ, ঘাড় বা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা রয়েছে। তারাও এই আসনগুলি করতে পারেন। লাভদায়ক হবে। ভিডিও, বই ইত্যাদি দেখে এই আসনগুলি করা যায়। তবে, যোগগুরুর সাহায্য নেওয়া দরকার। প্রতিটা মানুষের নির্দিষ্ট শরীরিক সক্ষমতা ও দুর্বলতা থাকে। তা বুঝে যোগগুরু তাঁদের জন্য সঠিক যোগাসন নির্ধারণ করে। সাধারণত, আমরা প্রতিটি আসন তিন থেকে ছয়বার করতে পারি। শরীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ধরে করা যায়।
১. সেতুবদ্ধাসনে:- কোমর উপরেের দিকে উঠে যায়। ডায়াফ্রাম উল্টোদিকে থাকার দারুন, চট করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে দ্রুত অক্সিজেন বিনিময় হয়।
২. মৎস্যাসনে:- বুক প্রসারিত হয়। প্রচুর অক্সিজেন ঢুকতে পারে। এটি প্রাথমিক প্রক্রিয়া।
৩. যাঁরা শরীরিকভাবে সক্ষম, চক্রাসন করতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই যোগগুরুর পরামর্শ নিয়ে। এই আসনে মাথা নীচে, বুকটা উপরে থাকেয় ফুসফুস সক্রিয় হয়ে ওঠে ও তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে সহজ প্রাণায়াম।
৪. উষ্টাসন:- এই আসন ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড করা যায়। প্রথমে বজ্রাসনে বসে ণাটিতে হাঁটু রেখে ধীরে ধীরে বুকটা সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে মেরুদন্ডকে বাঁকাতে হবে। নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছনের দিকে শরীর বাঁকিয়ে শরীরের উপরের অংশ অনুভূমিক অবস্থায় আনতে হবে। ধীরে ধীরে হাতের তালু পায়ের তালুতে রেখে মাথাটা পিছনদিকে বাঁকিয়ে দিতে হবে। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রেখে ধীরে ধীরে উঠে বসতে হবে। যাঁদের গোড়ালি বা হাঁটুর ব্যথা রয়েছে বা হার্টের সমস্যা, তাঁদের জন্য এই আসন নয়। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগায় কাজ দেয় উষ্ট্রাসন।
৫. মৎস্যান:- সোজা হয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে পড়তে হবে। ধীরে ধীরে পিঠ বাঁকিয়ে ধনুকের মতো করতে হবে। হাতের কনুই, নিতম্ব এবং মাথায় ভর দিয়ে। বুক যেন উপরের দিকে উঠে আসে। মাথা মাটিতে রেখে সাপোর্ট দিতে হবে এবং পা থাকবে সজা। হাতে ভর দিয়ে কাঁধ মাটি থেকে তুলতে হবে। তিন-চারবার গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। স্পাইনাল কর্ড বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে এই আসন করা যাবে না।
৬. সেতুবদ্ধাসন:- চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর পা হাঁটুর কাছে ভাঁজ করে উলম্ব অবস্থায় এনে হাত পাশে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করতে হবে। এবার ধীরে ধীরে পিঠ উঁচু করে উলম্ব অবস্থানে আনতে হবে। যাতে পা, বুকে, পেট ও হাত মিলে একটি আয়তক্ষেএ তৈরি হয়। এই অবস্থায় ১০ সেকেন্ড স্থির থেকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হবে।
৭. পবনমুক্তাসনে:- দেহের দূষিত বায়ু বেরিয়ে যায়। আসনটি ৩০ সেকেন্ড করে করা যায়।
৮. আসনের লাভ:- এই আসনগুলি শরীরে অক্সিজেনের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। বিশুদ্ধ অক্সিজেন শরীরে গেলে, ত করোনা বা কোনও রোগকে বাসা বাঁধতে দেয় না। ২৫ থেকে ২৮ মিনিট নিয়মিত যোগাভ্যাস করতে পারলেই সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, টনসিল, মাইগ্রেন বা সাইনাসের মতো রোগও সেরে যাবে। কোনও ওষুধ ছাড়াই। এছাড়া মধু, হলুদ, লবঙ্গ, কাঁচা রসুন ইত্যাদি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম থাকেই আমরা জলপাইগুড়ি জেলাজুড়ে কাজ করেছি। বহু জায়গায় মিশেছি। কিন্তু যোগের শক্তিতে করোনা আমাদের মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। শেষে একটাই কথা মাথায় রাখবেন, প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। দিনে ১২ থেকে ১৪ গ্লাস। এতে শরীর শুদ্ধ হয়।
Comments