ছাএ-ছাএীদের যোগব্যায়াম।
Yoga for boys and girls.
ছাএ-ছাএীদের যোগব্যায়াম।
করোনা সঙ্কট ধীরে ধীরে আমাদের জীবন আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে মুশকিলে পড়েছে আমাদের পরিবারের ছাএ-ছাএীরা। কারণ এখনও পর্যন্ত স্কুল কলেজ বন্ধ। 'নিউ নর্মাল' মেনে অনলাইন ক্লেসেই ক্রামশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে ছাএ-ছাএীরা। খেলাধুলো বন্ধু, বান্ধদের সঙ্গে গল্পও বন্ধ। ফলে এই দীর্ঘ সময় বাড়িতে বসে থাকার ফলে অভিভাবকদের থেকে সন্তানদের সম্পর্কে বেশকিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বাচ্চারা অলস হয়ে উঠেছে। তাদের ক্লান্তি বাড়াছে। মুএমনকী অনেকের ওজনও বাড়ছে। এখানে বলা প্রয়োজন, যোগ কিন্তু মানুষের মন এবং শরীরকে সতেজ করে তুলতে সক্ষম। তবে আগে ছাএ-ছাএীদের মূল সমস্যা বুঝতে হবে।
সমস্যা কোথায়..? লকডাউনের ফলে ছাএ-ছাএীদের দৈনন্দন জীবনে রুটিনের পরিবর্তন ঘটেছে। খাদ্যাভ্যাসও বদলেছে। ওদের ক্ষেএে গ্রীষ্মের বা শীতের ছুটি উপভোগ্য। কারণ সেখানে লকডাউন নেই।
বিগত কয়েকমাস একটানা বাড়িতে থাকার ফলে শিশুমনেও কিন্তু মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।
অনেকের মধ্যে ফাস্টফুডের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে।
বাচ্চারি খেলাধুলো না করায় মেদ ও ক্লান্তি দুই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অনেকের পড়াশোনার প্রতি একাগ্রতা কমেছে।
কেউ সারাক্ষণ মোবাইল বা টিভিতে মগ্ন। ফলে অল্পবয়সে তাদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে।
খেলাধুলো বা শরীরচর্চা করলে শরীরের কিছু নির্দিষ্ট হরমোন ক্ষরণ হয়, যা আমাদের মনকেও ভালো রাখে। তাই সেটা না হলে মন খারাপ বা অবসাদ হওয়াটা স্বাভাবিক।
যোগ কী বলছে..?
আমাদের মনের এই অশান্তি দূর করে আমাদের জীবনযাপনকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারে যোগব্যায়াম। পতঞ্জলির মতে অষ্টাঙ্গ যোগকে আটটি অংশে ভাগ করা হয়েছে, যাকে 'যোগসূএ' বলা হয়। এর মধ্যে প্রথম দুটো ধাপকে বলা হয় যথাক্রমে 'যম' ও 'নিয়ম'। যম অর্থাৎ বাহ্যিক বা সামাজিক নিয়মানুবর্তিতা। যমের আবার পাঁচটি ভাগ- অহিংসা (কাউকে হিংসা বা আঘাত না করে), সত্য (মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া), অস্তেয় (চুরি না করা), ব্রক্ষ্মচার্য (কামকে নিয়ন্ত্রণ করা) এবং অপরিগ্রহ (কোনওকিছুর লোভ সংবরণ করা বা আটকে না রাখা)। এরপর আসে নিয়ম। অর্থেৎ মানসিক বা অভ্যন্তরীণ নিয়মিনুবর্তিতা। নিয়মের আবার পাঁচটি ভাগ- শৌচ (শুদ্ধতা), সন্তোষ (অল্পেই সন্তুষ্ট থাকা), তপঃ (তপস্যা বা ধ্যানের মাধ্যমে নিয়মনিষ্ট জীবনযাপন), সাধ্যায় (পড়াশোনা করা) এবং ঈশ্বর প্রণিধান (ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা)। এই 'যম' এবং 'নিয়ম' কে কোনও ব্যক্তি ব্যবহারিক জীবনেযাপনে ফিরে যেতে পারবেন। অভিভাবকরা বাড়িতে ছাএছাএীদের এই আদর্শ গুলো শেখাতে পারলে তারাও উপকৃত হবে।
কী কী ব্যায়াম..? ১৮ থেকে ২০ বছরের নীচের ছাএ-ছাএীদের জন্য বাড়িতে কিছু স্ট্রেচিং ও ব্রিদিং এক্সারসাইজের প্রয়োজন। কারণ সেগুলো আমাদের মন ভালো রাখার জন্য প্রযোজনীয় হর্মোনের ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে ধীরে ধীরে ওদের অবসাদ, ক্লান্তি, একাকিত্ব দূর হবে। এরপর ওরা করাতে পারে সূর্য নমস্কার। এই ব্যায়ামের ১২টি পর্যায় অভ্যেস করতে পারলে শরীরের পেশিও অস্থিগুলো সতেজ হয়ে ওঠে। বলা যায় অনেকটা ওয়ার্মআপের কাজ হয়ে যায়। এরপর ওরা করবে পরপর বেশ কয়েকটি আসন। এগুলি মূলত দাঁড়িয়ে বা বসে করা যায়। তার মধ্যে রযেছে- অর্ধকটি চক্রাসন, অর্ধ চক্রাসন, পদহস্তাসন, বৃক্ষাসন, বজ্রাসন, উ্য্রাসন, অর্ধকূর্মাসন এবং গোমুখাসন। মেয়েদের যাদের মেনস্ট্রুয়েশন শুরু হয়েছে, তারা সুপ্ত বজ্রাসন এবং জানু শীর্ষাসন অভ্যেস করলে উপকার পেতে পারে। এরপর ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে কিছু আসনের নাম করব যেগুলি শুয়ে করতে হবে। যেমন- পবনমুক্তাসন, উথান পদাসন, সেতুবন্ধাসন, ভুজাঙ্গাসন, শলভাসন, নৌকাসন এবং যষ্টিকাসন।
এই আসনগুলি মূলত দেহের মেদ কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকছেন, তাদের জন্য অবশ্য করনীয় ক্রিয়া- এাটক। এক্ষেএে দু'ফুট দূরে একটা নির্দিষ্ট বিন্দু কল্পনা করে বা মোমবাতির শিখার দিকে দুই মিনিট একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে হয়। এতে মনের একগ্রতা যেমন বাড়বে, তেমনই চোখেরও ব্যায়াভ হবে। এছাড়াও করা যেতে পারে চোখের রোটেশনাল এক্সারাসাইজ। অর্থাৎ উপর, নীচ, ডান এবং বাম দিকে ধারাবাহিকভাবে তাকানো। এরপর ওরা করতে পারে কিছু প্রণায়াম। যেমন ভস্ত্রিকা, নাড়ি শোধন, ভ্রামরি। সবশেষে ঞ্জান মুদ্রায় বসে 'ওম', সহযোগে ধ্যান করে ব্যায়াম শেষ করা উচিত।
যোগব্যায়াম কখন করবেন...?
আমরা সাধারণত বলি সকালে খালি পেটে যোগাসন করা উচিত। তাতে উপকার বেশি পাওয়া যায়। তবে সমায়ের অভাব হলে ছাএ-ছাএীরা বিকেলের দিকেও আসন করতে পারে। সেক্ষেএে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সময়টা অবশ্যই দুপুরের খাবারের অন্তত তিন ঘন্টা পরে হয়। বাড়িতে অভিভাবকদের তদারকিতেই আসন করা উচিত। শুরুতে ওদের হয়তো ভালো লাগবে না। সময় বেশি লাগবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যেস তৈরি হলে ওরা নিজের চেষ্টায় আসনগুলো করতে শুরু করবে।
যোগব্যায়াম এর সময় কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে দেখে নিন...!
উপরোক্ত আসন বা প্রণায়ামগুলো ১০ সেকেন্ড ধরে একটানা পরপর করতে হবে। প্রতিটা আসনের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। তাতে ক্লান্তি দূর হবে আরও একটা সতর্কবার্তা না বলে দিলেই নয়। ইন্টারনেট দেখে বা অনভিঞ্জ কারও থেকে জেনে যোগাসন করা উচিত নয়। এর ফলে কিন্তু অজান্তে দেহের কোথাও চোট লাগতে পারে। বিশেষঞ্জের পরামর্শ নিয়ে একমাএ তার পরেই নিয়মিত যোগাসন অভ্যেস করা উচিত।
Comments